রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

স্বাবলম্বী হোক আপনার সন্তান…..

স্বাবলম্বী হোক আপনার সন্তান…..

স্বদেশ ডেস্ক: প্রত্যেক মা-বাবা চান যে, তাঁদের সন্তানরা যেন থাকে দুধে-ভাতে! কিন্তু সন্তান ‘মানুষ’ করতে গিয়ে সন্তানরা মানুষ হয়ে ওঠার পথে অজান্তেই আমরা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি না তো?
কখনও লক্ষ্য করেছেন যে, পাখির বাচ্চারা কীভাবে উড়তে শেখে? লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, বাচ্চারা একটু বড় হলে, পাখিরা তাদের ঠেলে বাসা থেকে বের করে দেয় যেন নিজেরাই নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে, উড়তে শিখতে পারে, এবং মা-বাবার ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠে। জীবনে পরিবর্তন অনিবার্য। (বয়ঃবৃদ্ধিও পরিবর্তন) এই অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার আরেক নামই স্বাবলম্বী হওয়া। প্রাণী জগতে, মানুষ তথাকথিত ‘শ্রেষ্ঠ’ শ্রেণীর প্রাণী হলেও, আমাদের ‘পেরেন্টিং স্টাইল’ বেশ ত্রুটিপূর্ণ! আমরা অজান্তেই নিজের ছেলেমেয়েদের অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াই।
ছেলেমেয়েকে সর্বদা সমস্তরকম নিরাপত্তা দিতে চাওয়াটা খুবই স্বাবভাবিক। অধিকাংশ মা-বাবারা হাতের তেলোতে বা কোলে-পিঠেই মানুষ করতে চান তাঁদের সন্তানকে। কিন্তু এইভাবে চললে, আপনার সোনামণি যে আর মানুষ হয়েই উঠবে না! প্রকৃত অর্থে মানুষ সেই যে বয়সের সঙ্গে নিজের এবং অন্যের প্রতি দায়িত্ব নিতে সক্ষম। তাই সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে সাহায্য করা দরকার। কীভাবে নিজের সন্তানকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন?
সন্তানকে বিশ্বাস করতে শিখুন অনেক মা-বাবাই মন থেকে বাচ্চাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। তাঁরা ভাবেন যে তাঁদের অন্তুপ্রাণ সন্তানটি তাঁদের সহায়তা বিনা অচল হয়ে যাবে! আমরা বলি – ওকে একটু বিশ্বাস করতে চেষ্টা করুন। ও নিজে থেকেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারবে এটা বুঝতে শিখুন। ভেবে দেখুন একদিন আপনিও ছোট ছিলেন। স্বাভাবিক নিয়মেই কিন্তু বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে নিজের দায়িত্ব নিতে সফলভাবে শিখেছেন। আপনার সন্তানও ঠিক উতরে যাবে। তা ছাড়াও, ওকে বিশ্বাস করলে, ওর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের দায়িত্ব নিতে শেখা। ধীরে-ধীরে বাচ্চাকে নিজের বিছানা গোছানো, নিজের ঘরদোর পরিষ্কার করানো ইত্যাদি কাজ শেখান। এটা ওকে বুঝিয়ে দেবেন যে সে অগছোলো হলে কী সমস্যায় সে পড়তে পারে এবং এও জানিয়ে দেবেন যে সে সমস্যার সমাধান তাকে নিজেকেই করতে হবে আপনি তার হয়ে করে দেবেন না। বাচ্চাকে নিয়মানুবর্তিতা শেখান। মানুষের জীবনে রুটিনের প্রয়োজন আছে। তা মেনে চললে জীবনে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ঘুম এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে শেখান। বাচ্চাকে নিজের বাড়ির ফোন, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর শিখতে সাহায্য করুন। এগুলি যেন ওর ঠোঁটস্থ থাকে। তাহলে ও ধীরে ধীরে আপনার সাহায্য ছাড়াই স্কুল বা খেলার মাঠ থেকে বাড়ি যাতায়াত করতে শিখবে।
সন্তানকে সময়ের মূল্য দিতে শেখান। সময়ের কাজ সময় মতো না করলে যে সে সমস্যায় পড়তে পারে তা ও বুঝুক। স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিনিয়ত ওকে ডেকে দেবেন না। আ্যালার্ম ঘড়িতে দম দিয়ে রাখুন (বা আরও ভাল হয় ওকে এই কাজটি শেখান), ও যাতে নিজে থেকেই স্কুল যাওয়ার জন্য উঠতে পারে তার ব্যবস্থা করুন। সময়মতো কাজ না করলে ঠেকে ও ঠিকই শিখবে। লেট করে স্কুল পৌঁছনোর দরুণ স্কুলে ভর্ৎসনা শুনে ও ঠিকই সময়ের মূল্য বুঝবে। নিজের হোমওয়ার্ক বা পড়াশোনার দায়িত্ব ও যাতে নিজেই নেয়-তার ব্যবস্থা করুন। লেট করে হোমওয়ার্ক জমা দিলে বা পড়াশনায় ফাঁকি দিলে আখেরে যে ওরই ক্ষতি হবে তা ও নিজেই বুঝুক। লেট করে হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে ওকে স্কুলে ধমক খেতে দিন। সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করতে যাবেন না। নিজের ভুলের মাশুল যে নিজেকেই দিতে হয়, এই শিক্ষাটি শেখার প্রয়োজন আছে বইকি…!
বাড়িতে ভাইবোন বা স্কুলে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হলে নিজেকেই মেটাতে দিন ওকে। যতক্ষণ না এসব ঝগড়া-বিবাদ হাতা-হাতিতে পরিণত না হচ্ছে-সমসাময়িকদের সঙ্গে ঝামেলা ও নিজেই মেটাক। এতে ওর ইন্টারর্পাসোনাল স্কিল বাড়বে। নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে শেখান-আপনার অনুপস্থিতিতে, সে যাতে নিজের নিরাপত্তার ভার নিজেই নেয় তার ব্যবস্থা করুন। সন্তানকে ‘গুড টাচ’ এবং ‘ব্যাড টাচ’-এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি বুঝতে শেখান। এতে ঘরে বা বাইরে নিজেকে নিরাপদ রাখতে ও শিখবে। একটু বড় হলে (১২+) সন্তানকে ফিন্যানশিয়াল রেস্পন্সিবিলিটি শেখান। ব্যাঙ্কে ওর একটি সেভিংস আ্যাকাউন্ট করে দিতে পারেন। কীভাবে চেকবুক ব্যালেন্স করতে হয়, বাজেট মেনে চলতে হয় শেখাতে পারেন। তবে মনে রাখবেন-সে কিন্তু ছোট। প্রতিটি কাজ আপনার মতো ‘নিখুঁত’ ভাবে করতে পারবে না। সেটা আশাও করবেন না। তাছাড়া, প্রতি ধাপে আপনার সন্তানকে উৎসাহ যোগাতে হবে। নিজের কাজ ঠিকঠাক করার জন্য প্রশংসা করতে ভুলবেন না। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
সর্বশেষে, আপনি যে ওর পাশে সর্বদা রয়েছেন আশ্বস্ত করবেন। স্বনির্ভর হওয়ার পথে হোঁচট খেলে, আপনার তরফ থেকে সাহায্যের হাত যে ও সবসময় প্রত্যাশা করতে পারে সেটা জানাতে ভুলবেন না যেন!

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877